রোহিঙ্গাদের বিদেশ যাওয়ার নিরাপদ রুট সুনামগঞ্জ, সক্রিয় দালাল চক্র

ডেস্ক রিপোর্ট – নাগরিকত্ব সনদ দেখিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ার নিরাপদ রুট হিসেবে সুনামগঞ্জকে বেছে নিয়েছে রোহিঙ্গা ও দালাল চক্র। এই সুযোগে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট তৈরি ও ভিসা করে দিতে দালাল চক্র বিরাট অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়, বিশেষ করে এইসব রোহিঙ্গারা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে অনেক সময় নানা অপরাধ কর্মে জড়িত হয়ে পড়ে। ধরা পড়লে এদের জন্য বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হয়।

এমন তথ্য জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশিরা। তারা জানান, এসব রোহিঙ্গাদের জন্য তাদেরকে অনেক সময় বিব্রত হতে হয়। এরা আবার দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমারে যাতায়াত করে থাকে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার এমনিভাবে পাসপোর্ট করতে এসে ধরা পড়ে দুই রোহিঙ্গাসহ চার দালাল।

সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ পৌরসভার আলীপাড়ার নাগরিক হিসেবে জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে পাসপোর্ট করার আবেদন করেন টেকনাফের মালুখলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আজিম আলীর মেয়ে রিয়াজুল বেগম (১৮)। তিনি রোহিঙ্গা নারী। কিন্তু পুলিশ খবর পেয়ে তাকে আটক করে। পরে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে পুলিশ কক্সবাজারের উখিয়া মহিরপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাব্বির আহমেদর ছেলে আ. হালিমকে (২৪) আটক করে শহর থেকে।

হালিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তাকারী জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের আমির উদ্দিন (২২), জসিম উদ্দিন (২৪), রামনগর গ্রামের নুর হোসেন (২৩) ও ভীমখালী ইউনিয়নের তেরানগর গ্রামের ফরহাদ আহম্মদকে (৩৬) আটক করা হয়।

রোহিঙ্গা দুজনকে ১০ হাজার টাকায় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য সুনামগঞ্জে নিয়ে আসে দালাল চক্র। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়ার বাসিন্দা হিসাবে ২ এপ্রিলের জন্ম নিবন্ধন দেখানো হয় রোহিঙ্গা নারী রিয়াজুল বেগমের।

সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, রিয়াজুল বেগমের সব কাগজপত্র পরীক্ষা করে কথা বলার সময় বিষয়টি ধরা পরে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ ওই নারীকে আটক করে। পরে তার কথা মত পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তাকারী জামালগঞ্জের চার প্রতারক ও অন্য আরেক রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ।

সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক অর্জুন কুমার ঘোষ বলেন, কাগজপত্র পরীক্ষার সময় সন্দেহ হয়। আমরা তাৎক্ষণিক পুলিশকে বিষয়টি অবগত করি।

এর আগে ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের আকিদাবাদ জেলার মংদু থানার কুয়ান শিবং গ্রামের সাকির আহমদের ছেলে আব্দুছ ছবুর (৫১), স্ত্রী আমিনা বেগম (৪২), ছেলে আব্দুল হালিম (২৩), মেয়ে হালিমাতুস সাহিয়া (১২), মেয়ে তালিহা আক্তার (১৫), মেয়ে হারিসা আক্তার (১৩), ফারিসা আক্তার (১১), ছেলে আসলম (৭), মেয়ে উম্মা বেগম (২), আব্দুল হালিমের স্ত্রী উম্মূল খাইরিন (২২) ও মেয়ে মোশারফা (১), আব্দুল হালিমের শ্যালক কুয়ান শিবং গ্রামের নূর আলমের ছেলে কাওছারকে (৭) আটক করে পুলিশ। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়।

এই ১২ রোহিঙ্গার মধ্যে আব্দুছ ছবুর, আমিনা বেগম, আব্দুল হালিম, হালিমাতুস সাহিরা, তালিহা আক্তার ও উম্মূল খাইরিনসহ মোট ছয়জনকে অবৈধভাবে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হয়েছিল।

পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নাগরিক সনদ বা জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করে একদল দালাল চক্র। এরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বৈধ-অবৈধভাবে নারী এবং পুরুষ শ্রমিক পাঠানোর দালালী করে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। নাগরিকত্ব বা জন্ম নিবন্ধনের আবেদনে কাউন্সিলারদের সুপারিশ দেখলে তাদের (কাউন্সিলরদের) উপর আস্থা রেখে প্রতি স্বাক্ষর করি আমি। কাউন্সিলদের বা সংশ্লিষ্ট শাখার এই বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার আদালতের নির্দেশে আটক দুই রোহিঙ্গাকে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।